কিভাবে Google তাদের Search Results আপডেট করে?

অনলাইন মার্কেটিং, ব্লগিং ও অনলাইন আয়ের ক্ষেত্রে অর্গানিক ট্রাফিক ছাড়া কোন ভাবে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। ওয়েবসাইটকে পরিপূর্ণ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) না করে অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়া কোন ভাবে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি গুগল সার্চ ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে গুগল অর্গানিক ট্রাফিক নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আর যখন গুগল অর্গানিক ট্রাফিক পেয়ে যাবেন তখন সফলতা আপনার হাতে পেয়ে যাওয়াটা হবে সময়ের বিষয় মাত্র।
কিভাবে Google তাদের Search Results আপডেট করে?
সাধারণত গুগল প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর অন্তর সার্চ রেজাল্ট ও সার্চ র‌্যাংকিং আপডেট করে থাকে। কখনো কখনো বছরে ৪-৫ বার Search Results আপডেট করে থাকে। তখন দেখা যায় যে, আপডেট করার আগে যে সমস্ত ব্লগের পেজ গুগল সার্চ রেজাল্টে পাওয়া যেত সেগুলি এখন আর পাওয়া যচ্ছে না। অন্যদিকে আগে যে সকল ওয়েবসাইট সার্চ রেজাল্টে পাওয়া যেত না সেগুলি আপডেট হওয়ার ফলে পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের পরিবর্তন গুগল সার্চ রেজাল্ট আপডেট করার পর লক্ষ্য করা যায়। গুগল সার্চ রেজাল্ট আপডেট করার ফলে অনেক ওয়েবসাইট সফলতা থেকে ছিটকে পড়ে আবার অনেক ওয়েবসাই সফলতার প্রথম ধাপে উঠে আসে। এই পরিবর্তন কেন হয় ও কি কি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কিভাবে গুগল একটি সাইট খুজে ও Crawls করে?

বর্তমানে ইন্টারনেট বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন সচল ওয়েবসাইট ও ব্লগ রয়েছে। গুগল বট প্রতিনিয়ত সবগুলো ওয়েবসাইট ক্রল করে ওয়েবসাইটের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এলগরিদম অনুসারে সাজিয়ে রাখে। এ ক্ষেত্রে গুগল ক্রলার কোন প্রকার ভূল করে না বা ভূল করার কোন প্রকার সম্ভাবনা রাখে না। সাধারণত ওয়েবসাইট সার্চ ও ক্রল করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করে।

Analyze Indexing History:

অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘ দিন হয়েছে ব্লগে একটি নতুন পোষ্ট শেয়ার করা হয়েছে কিন্তু এখনো গুগল সার্চ রেজাল্টের পাতায় পোষ্টটি পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত গুগল বিভিন্ন কারনের একটি পোষ্ট ইনডেক্স করতে সময় নিতে পারে অথবা ইনডেক্স নাও করতে পারে। সার্চ ইঞ্জিন কত দ্রুত একটি পোষ্ট ইনডেক্স করবে তা কিছুটা নির্ভর করে ব্লগের র‌্যাংক এর উপর। অনেক ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের র‌্যাংক ভাল হলে সার্চ ইঞ্জিন ক্রলার পোষ্ট দ্রুত ইনডেক্স করে নেয়। আপনার ওয়েবসাইটের পোষ্টগুলি ইনডেক্স হচ্ছে কি না সেটা জানতে চাইলে Google Webmaster Tools এর সাহায্য নিতে পারেন। গুগল ওয়েবমাস্টার টুলস থেকে আপনার ইনডেক্স স্ট্যাটাস জানার পাশাপাশি দ্রুত ইনডেক্স করানোর জন্য কি প্রয়োজন সে বিষয়ে কিছু নির্দেশনা বা ধারনা পেয়ে যাবেন।

Google Indexing Factor:

আমার বিগত তিন বৎসরের ব্লগিং অভিজ্ঞতা আমি নিম্নলিখিত কারনগুলি খুজে বের করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে গুগল একটি পোষ্ট ইনডেক্স করে থাকে।
  • Domain Authority: ওয়েবসাইট বা ব্লগের Domain Authority ১০০ পয়েন্ট বা তার কাছাকাছি থাকলে গুগল সার্চ ইঞ্জিন একটি ওয়েবসাইটের র‌্যাংক ভাল হিসেবে গণ্য করে নেয়। এ ক্ষেত্রে ব্লগের পোষ্ট অতি দ্রুত ইনডেক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • Page Authority: কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগের Page Authority ১০০ পয়েন্ট বা তার কাছাকাছি থাকলে সে ক্ষেত্রেও গুগল সার্চ ইঞ্জিন একটি ওয়েবসাইটের র‌্যাংক ভাল হিসেবে গণ্য করে নেয়। এ ক্ষেত্রেও ব্লগের পোষ্ট অতি দ্রুত ইনডেক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • Regular Post Update: পোষ্ট দ্রুত ইনডেক্স করার ক্ষেত্রে নিয়মিত আর্টিকেল শেয়ার করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, যারা ব্লগে নিয়মিত পোষ্ট শেয়ার করে তাদের ব্লগে গুগল বট নিয়মিত ভিজিট করে। এ ধরনের ব্লগের পোষ্ট খুব অল্প সময়ে ইনডেক্স হয়ে যায়।
  • Popularity of website: দ্রুত ইনডেক্স হওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কারণ জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলিতে স্বাভাবিক নিয়মে ট্রাফিক বেশী থাকে। সার্চ ইঞ্জিনও জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের সাথে এক ধরনের পরিচিতি স্থাপন করে নেয়। এ ক্ষেত্রে মানুষ যেমনি তার প্রিয় জিনিস ও ব্লগ নিয়মিত পড়ে সার্চ ইঞ্জিন ক্রলারও তার প্রিয় ওয়েবসাইট নিয়মিত ক্রল করে।
  • Backlinks: আপনার সদ্য শেয়ারা করা পোষ্টটি কোন ভালমানের ওয়েবসাইটের পোষ্টের সাথে লিংক করা থাকলে নুতন পোষ্টটি দ্রুত ইনডেক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ সার্চ ইঞ্জিন বট ভালমানের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করে। এ ক্ষেত্রে ক্রলার সেই ওয়েবসাইটটি ক্রল করার সময় আপনার নতুন পোষ্ট পেয়ে গেলে সেখান থেকে লিংক থ্রো করে আপনার পোষ্টটিতে সরাসরি চলে আসবে। এ ক্ষেত্রে আপনার নুতন পোষ্টটিতে পর্যাপ্ত কনটেন্ট থাকলে দ্রুত ইনডেক্স হয়ে যাবে।

GoogleBot, Crawling ও Indexing কি?

আপনার ওয়েবসাইটকে কিভাবে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত ইনডেক্স করবেন সে বিষয়ে জানার পূর্বে GoogleBot, Crawling ও Indexing বিষয়গুলি ভালভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারনা না থাকলে বুঝতে পারবেন যে, গুগল কিভাবে ওয়েবসাইটের তথ্য সংগ্রহ করে।
  • GoogleBot: গুগল বট হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী সফটওয়ার। এই গুগল বট ব্যবহার করে গুগল বিলিয়ন বিলিয়ন ওয়েবসাইটের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের তথ্য ভান্ডারে মজুদ করে রাখে। এটি প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে ওয়েবসাইটের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
  • Crawling: গুগল বট কর্তৃক তথ্য সংগ্রহ করার পর প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের আর্টিকেল Crawl করে কোন ওয়েবসাইটে নতুন কনটেন্ট পেলে আর্টিকেল সম্পর্কে গুগল এর কাছে রিপোর্ট করে।
  • Indexing: আর্টিকেল Crawling করার পর গুগল বট সমুদয় কনটেন্টের গুনগত মান যাচাই বাছাই করতঃ আর্টিকেল ও ওয়েবসাইটের কোয়ালিটি যাচাই করে ধারাবাহিকভাবে তথ্য ভান্ডারে Index করে রাখে। তখন সার্চ ইঞ্জিন সেই তথ্য ভান্ডারের সিরিয়াল অনুযায়ি ওয়েবসাইটের পোষ্ট গুগল সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শণ করে।
এখন আপনি নিজেই বুঝতে পারলেন যে, গুগল কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করতঃ ব্লগের দক্ষতা যাচাই করে সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শন করে। সম্পূর্ণ প্রসেসটাকে সংক্ষেপে এভাবে বলায় গুগল প্রথমে তথ্য সংগ্রহ করার পর সেগুলির মান যাচাই করতঃ তাদের তথ্য ভান্ডারে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওয়েবসাইটকে সার্চ রেজাল্টের বিভিন্ন পাতায় প্রদর্শন করে।

কিভাবে আপনার ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত Index করাবেন?

এ বিষয়ে আলোচনার পূর্বে আপনাকে ছোট একটি বিষয় বলে রাখছি যে, আপনার ব্লগটি যদি খুবই নতুন হয়ে থাকে তাহলে সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হতে কিছুটা সময় নেবে। কারণ যে কোন নতুন জিনিস সম্পর্কে কারো কাছে পরিচিতি পেতে কিছু সময় দিতে হয়। হুট হাট করে কেউ কারো কাছে পরিচিত হতে পারে না। নিচের কাজগুলি করলে আপনার ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত ইনডেক্স করতে পারবেন।
  • Google Webmaster Tools: এটি গুগলের ফ্রি এবং অত্যান্ত কার্যকরী একটি টুলস। আপনার ব্লগকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত ইনডেক্স করতে চাইলে অবশ্যই একটি একাউন্ট করে নিবেন। তাছাড়া এই টুলস ব্যবহার করে আপনার ব্লগের বিভিন্ন Crawl, Index সহ বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।
  • Create Sitemap: Google Webmaster Tools একাউন্ট তৈরি করার পর অবশ্যই আপনার ব্লগ সাবমিট করে নিবেন। এই সাইটম্যাপ এর মাধ্যমে গুগল আপনার ব্লগের কনটেন্টগুলি তাদের তথ্য ভান্ডারে সহজে পেয়ে যাবে। সাইটম্যাপ তৈরির বিষয়ে আমরা ইতোপূর্বে একটি বিস্তারিত পোষ্ট শেয়ার করেছি। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের পোষ্টটির সাহায্য নিতে পারেন।
  • Fetch It: এই অপশনটা Google Webmaster Tools এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই অপশন ব্যবহার করে আপনার ব্লগের পোষ্ট দ্রুত ইনডেক্স করে নেওয়ার জন্য গুগল এর কাছে অনুরোধ জানাতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র এক মিনিটে পোষ্ট ইনডেক্স করে গুগল সার্চ রেজাল্টে নিয়ে আসা সম্ভব হয়।
  • Google Analytics: গুগল Analytics আপনার ব্লগের কনটেন্ট সরাসরি সার্চ রেজাল্টে নিয়ে আসবে না। তবে আপনার ব্লগে কি পরিমানে ট্রাফিক কোন কোন উৎস হতে পাচ্ছেন ইত্যাদি বিষয়ে ধারনা নিয়ে ভবিষ্যতে কি করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

কিভাবে SEO ব্লগকে সাহায্য করে?

অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন এসইও করে কি হবে ভাই? বর্তমানে অনেক সোসিয়াল মিডিয়া রয়েছে যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পাওয়া যায়। আমি আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি না। সোসিয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি পর্যাপ্ত ট্রাফিক পাবেন কিন্তু সেটা অর্গানিক ট্রাফিক নয়। সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনি যখন পর্যাপ্ত ট্রাফিক পাবেন সেটা হবে অর্গানিক ট্রাফিক এবং সেই ট্রাফিকের মূল্য থাকবে সোসিয়াল মিডিয়ার ট্রাফিক এর চাইতে অনেক বেশী। তাছাড়া গুগল এ্যাডসেন্স ব্যবহারকারীদের পর্যাপ্ত রেভিনিউ এর জন্য অর্গানিক ট্রাফিক এর প্রয়োজন হয়। অর্গানিক ট্রাফিক প্রাপ্ত এ্যাডসেন্স ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন মূল্যও বেশী হয়ে থাকে।

উপসংহারঃ সব শেষে আবারও একটা কথাই বলব যে, আপনি যে ধরনের টেকনিক অবলম্বন করেন না কেন আপনার ব্লগে পর্যাপ্ত ভালমানের আর্টিকেল থাকতে হবে। ভালমানের আর্টিকেল ছাড়া সার্চ ইঞ্জিন বট আপনার ব্লগের কনটেন্ট যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে না। যার ফলে আপনার পোষ্ট সার্চ রেজোল্টের এলগরিদম তালিকার নিচের দিকে পড়ে থাকবে। আর তালিকার নিচের সারিতে থাকলে পোষ্ট সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজের ৪-৫ পাতায় অবস্থান নিতে পারবে না। পোষ্ট প্রথম পাতায় স্থান না পেলে সার্চ রেজাল্ট হতে কোন ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব হবে না।
Disqus Comments

Popular Posts